bangla premer golpo choti. সারা রাত আর দুচোখ এর পাতা এক হয়না রোদ্দুর এর। কি করবে ঠিক ভেবে পায়না ও। এদিকে ঘুমের অভাবে দুই চোখ রক্তজবার মতো লাল টকটকে হয়ে আছে। ছেলের দিকে চোখ পরতেই আৎকে ওঠে সৃষ্টি।
- ইসস কি হয়েছে বাবা? চোখ এমন লাল কেন? জ্বর টর বাধালি নাকি আবার?
- না কিছু হয়নি।
মায়ের চোখের দিকে আজ তাকাতে পারছে না রোদ্দুর।
- ইসসস বললেই হলো?
দৌড়ে এসে ছেলের কপালে হাত রাখে সৃষ্টি।
- আহহ বললাম তো হয়নি কিছু।
মায়ের হাত সরিয়ে দিয়ে উঠে পরে রোদ্দুর।
premer golpo
- কি হলো এমন করছিস কেন?
- কই কেমন আবার করলাম?? বলতে বলতে বাইরে কলতলার দিকে এগিয়ে যায় রোদ্দুর। হাতমুখ ধুয়ে এসে আলনা থেকে শার্ট আর প্যান্ট টা টেনে নেয়।
- কিরে এতো সকালে কই যাবি?
- কাজ আছে।
- খেয়ে তো যাবি??
- না।
- কেন?
- এমনি খেতে ইচ্ছে করছে না।
শার্ট গায়ে দিয়ে বোতাম গুলো লাগাতে লাগাতে বেরিয়ে যায় রোদ্দুর। পেছন থেকে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে সৃষ্টি। ভাবে হলো কি আজ ছেলেটার? ওর আচরন কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে!!
সৃজন তখনও ওঠেনি ঘুম থেকে। premer golpo
রাস্তায় বেরিয়ে এসে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় হাটতে থাকে রোদ্দুর। সামান্য এক দিনের ব্যাবধানেই যেন পুরো পৃথিবী পালটে গেছে ওর কাছে।
ও একটা জারজ সন্তান!! শুধু তাই না, সমাজের চোখে ঘৃন্য এক অজাচারের ফসল ও। ওর বাবা সম্পর্কে আপন ভাইবোন!! ভাবতে কেমন নিজের ওপরেই ঘেন্যা চলে আসে ওর। রাস্তায় হাটতে হাটতেই চোখে পরে ওদের ভার্সিটির বাসটা। কাছে আসতেই তাতে লাফিয়ে চড়ে রোদ্দুর। যিন্ত্রচালিতের মতো গিয়ে বসে পরে একটা সিটে।
সিটের গায়ে মাথা এলিয়ে দিয়ে চিন্তা করতে থাকে নিজের সদ্য জানা পরিচয় সম্মন্ধে। বাস ক্যাম্পাসে ঢুকতেই নেমে পরে রোদ্দুর। নাহহ আজ আর ক্লাসে যাবে না ও। ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে সামান্য হেটে এসে ঢেকে সোহোরাওয়ার্দী উদ্যানে। বেশ কিছুদিন দেখেছে এর চিপায় চাপায় চারুকলা ইনিস্টিউটের ছাত্রছাত্রীরা এক সাথে আসর জমায়। গাজা, ইয়াবা, মদ সব চলে সেই আসরে। চারুকলায় ওর বন্ধু আছে। premer golpo
কিন্তু ওদের এই আড্ডায় কখনো যোগ দেয়নি রোদ্দুর। কিন্তু আজ ওদের খুব দরকার ওর৷ ও যে কঠিন বাস্তব এর সম্মুখে দাড়িয়ে তা ভুলতে ওগুলো খুব দরকার ওর। ভেতরে ঢুকে খুব একটা খোঁজাখুঁজি করতে হয়ন, পেয়ে যায় ওদের। বসে পরে সেই আসরে। আজ মাতাল হবে রোদ্দুর। মদের বোতলে চুমুক দিয়ে ভুলে থাকবে সবকিছু।
এদিকে মেঘ এসে দেখে রোদ্দুর তখনো ক্যাম্পাসে আসেনি। অপরাজেয় বাংলার সামনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে ও রোদ্দুরের। মেঘ যখন রোদ্দুর এর অপেক্ষায়, রোদ্দুর তখন এক হাতে গাজার স্টিক আর এক হাতে মদের বোতল নিয়ে বসে আছে। আস্তে আস্তে দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে আসছে ওর। মেঘ বারবার তাকাচ্ছে ওর হাতঘড়িটার দিকে। কি ব্যাপার! আসছে না কেন এখনো? কাল রাতেই তো কথা হলো তখন তো বলল আসবে। আর যদি না আসতো তাহলে তো ফোন করে জানাতো। premer golpo
এদিকে ক্লাস এর সময় ও হয়ে এসেছে। মেঘ আস্তে আস্তে এগোতে থাকে ক্লাসরুম এর দিকে। প্রথম পিরিয়ড শেষ হতেই দু এক জনকে মেঘ জিজ্ঞেস করে রোদ্দুর এর কথা। একজন বললো হ্যা দেখেছি তো, আমরা এক ই বাসে ক্যাম্পাসে এসেছি। কেমন যেন অন্যমনস্ক লাগছিলো ওকে। বাস থেকে নেমেই কোথাও যেন গেল, আমি এই যে ডাকলাম পেছন থেকে, শুনলোই না!!!
চিন্তায় পড়ে যায় মেঘ। কোথায় যেতে পারে ও????
ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে ফোন দেয় রোদ্দুরকে। কয়েকবার রিং বাজতেই রাত রিসিভ করে রোদ্দুর।
- হ্যালো কোথাও তুমি?
- হ্যালো কে? ওপাশ থেকে জড়ানো গলায় উত্তর আসে।
- কে মানে??
- কে মানে কে? হু আর ইউ? আরো জড়িয়ে আসে রোদ্দুর এর কন্ঠ। premer golpo
- হয়েছে কি তোমার? তুমি ঠিক আছো? তোমার ভয়েস এমন লাগিছে কেন? আমি মেঘ।
- মেঘ!! ওয়াও তা সাদা মেঘ নাকি কালো মেঘ? সাদা মেঘে কিন্তু বৃষ্টি হয়না!! কালো মেঘে হয় হাঃ হাঃ হাঃ
- কিসব আবোল তাবোল বকছ? কোথায় তুমি?
- স্বর্গে। তুমি মেঘ হও বা আকাশ আমি তারো ওপরে।
রেগে গিয়ে ফোনটা কেটে দেয় মেঘ। আরো কয়েকজন কে ওর কথা জিজ্ঞেস করতেই একজন জানায় রোদ্দুরকে সোহরাওয়ার্দীতে ঢুকতে দেখেছে। দ্রুত সোহরাওয়ার্দীর দিকে যায় মেঘ। ভেতরে ঢুকে কিছুক্ষণ খুঁজতেই পেয়ে যায় রোদ্দুরকে। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না মেঘ।
- ছিঃ রোদ্দুর তুমি..
- কে? হু.. আরর ইইইউউউ? কে তুমি হুম ম-ম? premer golpo
রোদ্দুরকে ধরে টেনে তুলে আনে মেঘ।
- এই তুমি কে হুমমম? তুমি কি অপ্সরা? সর্গে তো অপ্সরা থাকে তা কোন অপ্সরী তুমি? মেনকা না রম্ভা??
মেঘ বুঝতে পারে কোনো হুশ নেই এখন রোদ্দুর এর। ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে মুখ খুলে পানির ছিটা দেয় রোদ্দুর এর মুখে।
- উহহম এইবার চিনেছি। তুমি মেনকাও না, রম্ভাও না তুমিতো একটু আগে ফোন করেছিলে, তুমি হলে মেঘ। সাদা মেঘ নও কালো মেঘ সে জন্য এখন বৃষ্টি হয়ে ঝরছো হাঃ হাঃ হাঃ।
রোদ্দুর এর মুখে আরো কিছুক্ষণ পানির ছিটা দিয়ে একটা রিকশা নেয় মেঘ। রিকশা ওয়াকে টিএসসিতে যেতে বলে ও। রিকশায় উঠতেই রোদ্দুর ওর মাথাটা এলিয়ে দেয় মেঘ এর কাধে। একটু যেন কেপে ওঠে মেঘের শরীরটা। অদ্ভুত ভালোলাগা ছড়িয়ে পরে ওর প্রতি শিরা উপশিরায়। মনে মনে এভাবে রোদ্দুরকে চাইলেও কোনোদিন মুখ ফুটে বলতে পারেনি ও, হয়তোবা বলবেও না কখনো। আজকের এই রিকশার স্মৃতিটা অম্লান থেকে যাবে ওর জীবনে। মেঘ তাকিয়ে দেখে দুচোখ বন্ধ রোদ্দুর এর। premer golpo
ইসসস কি সুন্দর শিশুর মতো কোমল নির্মল মুখটা। একটা জোরে হাফ নিঃশ্বাস ছাড়ে মেঘ। এই সামান্য স্মৃতিটুকুই হয়তোবা থাকবে ওর রোদ্দুর এর সাথে। ও কখনো রোদ্দুরকে বলতে পারবে না ওর মনের কথা। প্রিয়জনকে নিজের অনুভুতি না জানানোর মাঝে যে কি তীব্র ব্যাথা সেটা যে না করেছে সে বুঝবে না। চোখ ফেটে কান্না আসে মেঘের। ও কি করে রোদ্দুর কে ওর মনের কথা বলবে? ও যে..
রিকশা চলে আসে টিএসসিতে। নিজে আগে নেমে হাত ধরে রোদ্দুরকে নামায় মেঘ। রোদ্দুর এখন চুপচাপ হয়ে গেছে। আগের মতো আর ভুলভাল বকছে না। চা এর দোকানটার সামনে রোদ্দুরকে নিয়ে বসে মেঘ। পরপর চার পাঁচ কাপ তেতুল চা গেলার পরে কিছুটা মাতলামো কমে রোদ্দুর এর। কিন্তু ওর মাথাটা প্রচন্ড ধরে আছে। কিছুটা রাগ রাগ চোখে রোদ্দুর এর দিকে তাকায় মেঘ। মেঘের দৃষ্টি দেখেই কেমন ভেতরটা শুকিয়ে আসে ওর। এই মেয়েটাকে রাগতে দেখলে ও মায়ের পরেই সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। premer golpo
- ওখানে কেন গিয়েছিলে তুমি?
কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে রোদ্দুর।
- কি হলো বলো।
দ্বিধা ঝেড়ে চোখ তুলে তাকায় রোদ্দুর। ওর রক্তজবার মতো লাল চোখ দুটো দেখে ভয় পেয়ে যায় মেঘ।
- শুনতে চাও না? শুনতে চাও তুমি?? হাঃ হাঃ শুনলে ঘেন্নায় আমার সাথে বসতে চাইবে না তুমি। এই যে আমার পাশে বসে আছো না তুমি তাতেও লজ্জা পাবে যে কেন বসে ছিলে।
- কি এমন কথা যে আমি ঘেন্না করব?
- হাঃ হাঃ তুমি জানো আমি আমি একটা জারজ সন্তান! আই এম এ ব্লাডি বাস্টার্ড!! শুধু তাই না, আমি এক ঘৃণ্য অজাচার এর ফসল আমি মেঘ।
- রোদ্দুর!! premer golpo
- হ্যা মেঘ। আমার বাবা মার সম্পর্ক কি জানো? তারা দুজন আপন ভাই বোন। হাঃ হাঃ ঘেন্না হচ্ছে না? ভাবছ ছিঃ এই ছেলেটা আমার বন্ধু ছিলো!! তোমাকে দোষ দেইনা মেঘ! ঘেন্না করাই স্বাভাবিক।
- রোদ্দুর!! বলে রোদ্দুর এর কাধে হাত রাখতে যায় মেঘ।
ছিটকে সরে যায় রোদ্দুর দূরে।
- না মেঘ! আমি অপবিত্র। ছুয়ো না আমাকে।
- পাগলের মতো কথা বলবে না রোদ্দুর। উঠে গিয়ে রোদ্দুরকে পাশে এনে বসায় মেঘ। এই বাবা মা কে ভুল বুঝছো কেন?
- ভুল!! তুমি ভুল ভাবছো! আমি নিজ কানে শুনেছি।
- তুমি ভুল শুনেছো বলিনি, বলেছি ভুল ভেবেছো।
- কিভাবে ভুল ভাবলাম? premer golpo
- রোদ্দুর তুমিতো আমাকে বলেছো যে তোমার মা কতোটা কষ্ট করে সংসার চালান। তোমার বাবার সেবা করেন। তুমিতো বলেছো যে তাদের ভালোবাসা শ্রদ্ধা করবার মতো! সামান্য একটা কথায় কি তা ভুল হয়ে যাবে??
- সামান্য! এটাকে তুমি সামান্য বলছ! এই সমাজে অজাচার কি চোখে দেখা হয় তুমি জানো!!
ঘৃণায় মুখ বাকায় মেঘ।
- সমাজ! কোন সমাজের কথা তুমি বলছো রোদ্দুর? তোমার বাবা মা যখন সব হারিয়ে নিঃশ্ব অবস্থায় বস্তিতে আশ্রয় নিল তখন কি করেছে এই সমাজ? তোমরা যখন কষ্ট কিরে দিন যাপন করেছ কোথায় ছিল সমাজ! হতে পারে তোমার বাবা মা ভাইবোন। তবুও তো তাদের মধ্যে ভালোবাসা আছে।
- মেঘ!!! premer golpo
- হ্যা রোদ্দুর। তোমার বাবা বা মা কেউতো জোরপূর্বক কিছু করেনি, আস্তে আস্তে একটা ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তাদের। তাদের দুর্ভাগ্য যে তারা ভাই বোন! তুমি এ সম্পর্কের আড়ালে গিয়ে দুজন মানুষ হিসেবে ভাবো রোদ্দুর। আমার তো মনে হয়না তারা কোনো অন্যায় করেছে।
অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকায় রোদ্দুর।
- হ্যা রোদ্দুর। তাদেরকে এভাবে ভুল বুঝো না প্লিজ। আর হ্যা ওই যে বললে না যে আমি তোমাকে ঘৃণা করবো! আমার তো আরো মনে হয় আমার কথা শুনলে আমাকেই আরো ঘৃণা করবে তুমি।
- মেঘ!!!
- হ্যা রোদ্দুর। তুমি জানো আমি শিওর না যে আমার বাবা আসলে কে। অবাক হচ্ছো তাইনা? ছোট থেকেই দেখেছি উদ্যোম মেলামেশা চলে আমার বাড়িতে। এমন একটা পরিবেশে বড় হয়েছি তুমি ভাবতে পারো রোদ্দুর!! আমার মা বাবা নানা নানি কারো মধ্যে কোনো আড়াল ছিলোনা!!! রোদ্দুর তোমার বাবা মায়ের মধ্যে যে ভালোবাসা ছিলো তার ছিটেফোঁটাও ছিলোনা এদের মধ্যে। কেবল দেহের তাড়নায় পশুর মতো আচরণ করতো এরা। বলতে বলতে ঘৃণায় বেকে ওঠে মেঘের সুন্দর মুখটা। premer golpo
- থাক মেঘ.
রোদ্দুর কথা শুরু করতেই হাত তুলে থামিয়ে দেয় মেঘ।
- না রোদ্দুর! থামালে হবে না, আজকে সব কিছু শুনতেই হবে তোমাকে। তবে কি জানো ভালো হতে চেয়েছিল আমার মা! কিন্তু পারেনি বাবার জন্য। ওই লোকটা ভালো হতে দেয়নি মাকে। এমনকি আমি বড় হতেই তার লালসার চোখ আমার ওপরেও পরে।
- মেঘ!!!
- হ্যা রোদ্দুর। আমি ক্লাস এইট এ উঠতেই বাবা নানা ছলে গায়ে হাত দিতো আমার!! তখন না বুঝলেও এখন বুঝি যে মা ওই সময়টাতে আগলে রাখতো আমায়। কিন্তু এতে করে বাবার সব রাগ গিয়ে পরে মায়ের ওপর। সীমাহীন শারীরিক আর মানসিক অত্যাচার এ ভেঙে পরে মা। এক সময় অত্যাচার সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
মেঘের দুচোখের কোন চিকচিক করছে জলে। রোদ্দুর আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে মেঘের। নিজেকে সামলে নিয়ে আবারো বলতে শুরু করে মেঘ । premer golpo
- মায়ের মৃত্যতে বদলে গেলো আমার নানা আর নানী। কিছুদিন এর মধ্যে আমার নানীও মারা যায়। আর নানা আশ্রয় খুঁজে নেয় কোনার একটা ঘরে। সারাক্ষণ ওই ঘরটাতেই সেচ্ছাবন্দী থাকেন তিনি। কথা বলেনা কারো সাথে। একদম একা হয়ে গেলাম আমি।
নিজের অজান্তেই একটা হাত বারিয়ে মেঘকে নিজের দিকে টেনে নেয় রোদ্দুর। আকাশ টাও তখন ছেয়ে গেছে কালো রঙের মেঘে। বৃষ্টি নামবে যে কোনো সময়।
- ওই বয়সে একা আমি কি আর করতে পারতাম বলো?? ক্লাস নাইনে পড়া অবস্থায় প্রথম ধর্ষণ এর স্বীকার হই আমি রোদ্দুর তাও নিজের বাবার কাছে!!! কি রোদ্দুর এবারে ঘৃনা হচ্ছে আমার ওপর তাইনা??
তখন জলের ধারা গরিয়ে নামছে মেঘের দুগাল বেয়ে। হাত বারিয়ে সেই জল মুছে দিলো রোদ্দুর।
- না মেঘ আরো আপন মনে হচ্ছে।
- রোদ্দুর!!
- হ্যা মেঘ। premer golpo
- জানো আমি তোমাকে ভালোবাসি? অনেক দিন হলো ভালোবাসি। কিন্তু বলতে পারিনি কারন আমি এক ধর্ষিত মেয়ে!!!
- না মেঘ আমার কাছে তুমি পবিত্র। বাগানে ফুটে থাকা গোলাপ এর মতোই পবিত্র তুমি।
রোদ্দুর এর কথায় কান্নার ঢল নামে মেঘের দুচোখে। পাশ থেকে রোদ্দুর কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে হাওমাও করে। বাধা দেয়না রোদ্দুর। কাদুক মেয়েটা। কাঁদলে মন অনেক হালকা হয়। কান্নার দমকে কেঁপে কেঁপে উঠছে মেঘের শরীর। রোদ্দুর হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মেঘের পিঠে। এমন সময় কেঁদে ওঠে আকাশের মেঘ ও। ঝুম বৃষ্টি নেমে ভিজিয়ে দেয় দুজনকে। অনেক দিন হলো যেন কাঁদতেও ভুলে গেছে মেঘ। আজ কাঁদছে মন ভরে। premer golpo
ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে
- জানো রোদ্দুর অনেক বার ভেবেছি আত্মহত্যার কথা। কিন্তু পারিনি। ভেবেছি কি হবে এই জীবন দিয়ে? আমার মা ও তো ওই পথ বেছে নিয়েছিলো, সমাধান তো হয়নি। সেদিন ই প্রতিজ্ঞা করেছি আমার না, বরং ওই লোকের কোনো অধিকার নেই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার। একদিন না একদিন আমার হাতে মরবে আমার বাবা নামের ওই জঘন্য পশুটা।
একটানা ঝরে চলেছে বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিতে এক সাথে ভিজছে রোদ্দুর আর মেঘ। এই বৃষ্টি যেন ধুয়ে মুছে দিচ্ছে ওদের দুজনের মধ্যকার সমস্ত দূরত্ব। (চলবে.)
ঠিক যেন লাভস্টোরী টু - 8
Related posts:
- ইসস কি হয়েছে বাবা? চোখ এমন লাল কেন? জ্বর টর বাধালি নাকি আবার?
- না কিছু হয়নি।
মায়ের চোখের দিকে আজ তাকাতে পারছে না রোদ্দুর।
- ইসসস বললেই হলো?
দৌড়ে এসে ছেলের কপালে হাত রাখে সৃষ্টি।
- আহহ বললাম তো হয়নি কিছু।
মায়ের হাত সরিয়ে দিয়ে উঠে পরে রোদ্দুর।
premer golpo
- কি হলো এমন করছিস কেন?
- কই কেমন আবার করলাম?? বলতে বলতে বাইরে কলতলার দিকে এগিয়ে যায় রোদ্দুর। হাতমুখ ধুয়ে এসে আলনা থেকে শার্ট আর প্যান্ট টা টেনে নেয়।
- কিরে এতো সকালে কই যাবি?
- কাজ আছে।
- খেয়ে তো যাবি??
- না।
- কেন?
- এমনি খেতে ইচ্ছে করছে না।
শার্ট গায়ে দিয়ে বোতাম গুলো লাগাতে লাগাতে বেরিয়ে যায় রোদ্দুর। পেছন থেকে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে সৃষ্টি। ভাবে হলো কি আজ ছেলেটার? ওর আচরন কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে!!
সৃজন তখনও ওঠেনি ঘুম থেকে। premer golpo
রাস্তায় বেরিয়ে এসে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় হাটতে থাকে রোদ্দুর। সামান্য এক দিনের ব্যাবধানেই যেন পুরো পৃথিবী পালটে গেছে ওর কাছে।
ও একটা জারজ সন্তান!! শুধু তাই না, সমাজের চোখে ঘৃন্য এক অজাচারের ফসল ও। ওর বাবা সম্পর্কে আপন ভাইবোন!! ভাবতে কেমন নিজের ওপরেই ঘেন্যা চলে আসে ওর। রাস্তায় হাটতে হাটতেই চোখে পরে ওদের ভার্সিটির বাসটা। কাছে আসতেই তাতে লাফিয়ে চড়ে রোদ্দুর। যিন্ত্রচালিতের মতো গিয়ে বসে পরে একটা সিটে।
সিটের গায়ে মাথা এলিয়ে দিয়ে চিন্তা করতে থাকে নিজের সদ্য জানা পরিচয় সম্মন্ধে। বাস ক্যাম্পাসে ঢুকতেই নেমে পরে রোদ্দুর। নাহহ আজ আর ক্লাসে যাবে না ও। ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে সামান্য হেটে এসে ঢেকে সোহোরাওয়ার্দী উদ্যানে। বেশ কিছুদিন দেখেছে এর চিপায় চাপায় চারুকলা ইনিস্টিউটের ছাত্রছাত্রীরা এক সাথে আসর জমায়। গাজা, ইয়াবা, মদ সব চলে সেই আসরে। চারুকলায় ওর বন্ধু আছে। premer golpo
কিন্তু ওদের এই আড্ডায় কখনো যোগ দেয়নি রোদ্দুর। কিন্তু আজ ওদের খুব দরকার ওর৷ ও যে কঠিন বাস্তব এর সম্মুখে দাড়িয়ে তা ভুলতে ওগুলো খুব দরকার ওর। ভেতরে ঢুকে খুব একটা খোঁজাখুঁজি করতে হয়ন, পেয়ে যায় ওদের। বসে পরে সেই আসরে। আজ মাতাল হবে রোদ্দুর। মদের বোতলে চুমুক দিয়ে ভুলে থাকবে সবকিছু।
এদিকে মেঘ এসে দেখে রোদ্দুর তখনো ক্যাম্পাসে আসেনি। অপরাজেয় বাংলার সামনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে ও রোদ্দুরের। মেঘ যখন রোদ্দুর এর অপেক্ষায়, রোদ্দুর তখন এক হাতে গাজার স্টিক আর এক হাতে মদের বোতল নিয়ে বসে আছে। আস্তে আস্তে দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে আসছে ওর। মেঘ বারবার তাকাচ্ছে ওর হাতঘড়িটার দিকে। কি ব্যাপার! আসছে না কেন এখনো? কাল রাতেই তো কথা হলো তখন তো বলল আসবে। আর যদি না আসতো তাহলে তো ফোন করে জানাতো। premer golpo
এদিকে ক্লাস এর সময় ও হয়ে এসেছে। মেঘ আস্তে আস্তে এগোতে থাকে ক্লাসরুম এর দিকে। প্রথম পিরিয়ড শেষ হতেই দু এক জনকে মেঘ জিজ্ঞেস করে রোদ্দুর এর কথা। একজন বললো হ্যা দেখেছি তো, আমরা এক ই বাসে ক্যাম্পাসে এসেছি। কেমন যেন অন্যমনস্ক লাগছিলো ওকে। বাস থেকে নেমেই কোথাও যেন গেল, আমি এই যে ডাকলাম পেছন থেকে, শুনলোই না!!!
চিন্তায় পড়ে যায় মেঘ। কোথায় যেতে পারে ও????
ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে ফোন দেয় রোদ্দুরকে। কয়েকবার রিং বাজতেই রাত রিসিভ করে রোদ্দুর।
- হ্যালো কোথাও তুমি?
- হ্যালো কে? ওপাশ থেকে জড়ানো গলায় উত্তর আসে।
- কে মানে??
- কে মানে কে? হু আর ইউ? আরো জড়িয়ে আসে রোদ্দুর এর কন্ঠ। premer golpo
- হয়েছে কি তোমার? তুমি ঠিক আছো? তোমার ভয়েস এমন লাগিছে কেন? আমি মেঘ।
- মেঘ!! ওয়াও তা সাদা মেঘ নাকি কালো মেঘ? সাদা মেঘে কিন্তু বৃষ্টি হয়না!! কালো মেঘে হয় হাঃ হাঃ হাঃ
- কিসব আবোল তাবোল বকছ? কোথায় তুমি?
- স্বর্গে। তুমি মেঘ হও বা আকাশ আমি তারো ওপরে।
রেগে গিয়ে ফোনটা কেটে দেয় মেঘ। আরো কয়েকজন কে ওর কথা জিজ্ঞেস করতেই একজন জানায় রোদ্দুরকে সোহরাওয়ার্দীতে ঢুকতে দেখেছে। দ্রুত সোহরাওয়ার্দীর দিকে যায় মেঘ। ভেতরে ঢুকে কিছুক্ষণ খুঁজতেই পেয়ে যায় রোদ্দুরকে। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না মেঘ।
- ছিঃ রোদ্দুর তুমি..
- কে? হু.. আরর ইইইউউউ? কে তুমি হুম ম-ম? premer golpo
রোদ্দুরকে ধরে টেনে তুলে আনে মেঘ।
- এই তুমি কে হুমমম? তুমি কি অপ্সরা? সর্গে তো অপ্সরা থাকে তা কোন অপ্সরী তুমি? মেনকা না রম্ভা??
মেঘ বুঝতে পারে কোনো হুশ নেই এখন রোদ্দুর এর। ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে মুখ খুলে পানির ছিটা দেয় রোদ্দুর এর মুখে।
- উহহম এইবার চিনেছি। তুমি মেনকাও না, রম্ভাও না তুমিতো একটু আগে ফোন করেছিলে, তুমি হলে মেঘ। সাদা মেঘ নও কালো মেঘ সে জন্য এখন বৃষ্টি হয়ে ঝরছো হাঃ হাঃ হাঃ।
রোদ্দুর এর মুখে আরো কিছুক্ষণ পানির ছিটা দিয়ে একটা রিকশা নেয় মেঘ। রিকশা ওয়াকে টিএসসিতে যেতে বলে ও। রিকশায় উঠতেই রোদ্দুর ওর মাথাটা এলিয়ে দেয় মেঘ এর কাধে। একটু যেন কেপে ওঠে মেঘের শরীরটা। অদ্ভুত ভালোলাগা ছড়িয়ে পরে ওর প্রতি শিরা উপশিরায়। মনে মনে এভাবে রোদ্দুরকে চাইলেও কোনোদিন মুখ ফুটে বলতে পারেনি ও, হয়তোবা বলবেও না কখনো। আজকের এই রিকশার স্মৃতিটা অম্লান থেকে যাবে ওর জীবনে। মেঘ তাকিয়ে দেখে দুচোখ বন্ধ রোদ্দুর এর। premer golpo
ইসসস কি সুন্দর শিশুর মতো কোমল নির্মল মুখটা। একটা জোরে হাফ নিঃশ্বাস ছাড়ে মেঘ। এই সামান্য স্মৃতিটুকুই হয়তোবা থাকবে ওর রোদ্দুর এর সাথে। ও কখনো রোদ্দুরকে বলতে পারবে না ওর মনের কথা। প্রিয়জনকে নিজের অনুভুতি না জানানোর মাঝে যে কি তীব্র ব্যাথা সেটা যে না করেছে সে বুঝবে না। চোখ ফেটে কান্না আসে মেঘের। ও কি করে রোদ্দুর কে ওর মনের কথা বলবে? ও যে..
রিকশা চলে আসে টিএসসিতে। নিজে আগে নেমে হাত ধরে রোদ্দুরকে নামায় মেঘ। রোদ্দুর এখন চুপচাপ হয়ে গেছে। আগের মতো আর ভুলভাল বকছে না। চা এর দোকানটার সামনে রোদ্দুরকে নিয়ে বসে মেঘ। পরপর চার পাঁচ কাপ তেতুল চা গেলার পরে কিছুটা মাতলামো কমে রোদ্দুর এর। কিন্তু ওর মাথাটা প্রচন্ড ধরে আছে। কিছুটা রাগ রাগ চোখে রোদ্দুর এর দিকে তাকায় মেঘ। মেঘের দৃষ্টি দেখেই কেমন ভেতরটা শুকিয়ে আসে ওর। এই মেয়েটাকে রাগতে দেখলে ও মায়ের পরেই সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। premer golpo
- ওখানে কেন গিয়েছিলে তুমি?
কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে রোদ্দুর।
- কি হলো বলো।
দ্বিধা ঝেড়ে চোখ তুলে তাকায় রোদ্দুর। ওর রক্তজবার মতো লাল চোখ দুটো দেখে ভয় পেয়ে যায় মেঘ।
- শুনতে চাও না? শুনতে চাও তুমি?? হাঃ হাঃ শুনলে ঘেন্নায় আমার সাথে বসতে চাইবে না তুমি। এই যে আমার পাশে বসে আছো না তুমি তাতেও লজ্জা পাবে যে কেন বসে ছিলে।
- কি এমন কথা যে আমি ঘেন্না করব?
- হাঃ হাঃ তুমি জানো আমি আমি একটা জারজ সন্তান! আই এম এ ব্লাডি বাস্টার্ড!! শুধু তাই না, আমি এক ঘৃণ্য অজাচার এর ফসল আমি মেঘ।
- রোদ্দুর!! premer golpo
- হ্যা মেঘ। আমার বাবা মার সম্পর্ক কি জানো? তারা দুজন আপন ভাই বোন। হাঃ হাঃ ঘেন্না হচ্ছে না? ভাবছ ছিঃ এই ছেলেটা আমার বন্ধু ছিলো!! তোমাকে দোষ দেইনা মেঘ! ঘেন্না করাই স্বাভাবিক।
- রোদ্দুর!! বলে রোদ্দুর এর কাধে হাত রাখতে যায় মেঘ।
ছিটকে সরে যায় রোদ্দুর দূরে।
- না মেঘ! আমি অপবিত্র। ছুয়ো না আমাকে।
- পাগলের মতো কথা বলবে না রোদ্দুর। উঠে গিয়ে রোদ্দুরকে পাশে এনে বসায় মেঘ। এই বাবা মা কে ভুল বুঝছো কেন?
- ভুল!! তুমি ভুল ভাবছো! আমি নিজ কানে শুনেছি।
- তুমি ভুল শুনেছো বলিনি, বলেছি ভুল ভেবেছো।
- কিভাবে ভুল ভাবলাম? premer golpo
- রোদ্দুর তুমিতো আমাকে বলেছো যে তোমার মা কতোটা কষ্ট করে সংসার চালান। তোমার বাবার সেবা করেন। তুমিতো বলেছো যে তাদের ভালোবাসা শ্রদ্ধা করবার মতো! সামান্য একটা কথায় কি তা ভুল হয়ে যাবে??
- সামান্য! এটাকে তুমি সামান্য বলছ! এই সমাজে অজাচার কি চোখে দেখা হয় তুমি জানো!!
ঘৃণায় মুখ বাকায় মেঘ।
- সমাজ! কোন সমাজের কথা তুমি বলছো রোদ্দুর? তোমার বাবা মা যখন সব হারিয়ে নিঃশ্ব অবস্থায় বস্তিতে আশ্রয় নিল তখন কি করেছে এই সমাজ? তোমরা যখন কষ্ট কিরে দিন যাপন করেছ কোথায় ছিল সমাজ! হতে পারে তোমার বাবা মা ভাইবোন। তবুও তো তাদের মধ্যে ভালোবাসা আছে।
- মেঘ!!! premer golpo
- হ্যা রোদ্দুর। তোমার বাবা বা মা কেউতো জোরপূর্বক কিছু করেনি, আস্তে আস্তে একটা ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তাদের। তাদের দুর্ভাগ্য যে তারা ভাই বোন! তুমি এ সম্পর্কের আড়ালে গিয়ে দুজন মানুষ হিসেবে ভাবো রোদ্দুর। আমার তো মনে হয়না তারা কোনো অন্যায় করেছে।
অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকায় রোদ্দুর।
- হ্যা রোদ্দুর। তাদেরকে এভাবে ভুল বুঝো না প্লিজ। আর হ্যা ওই যে বললে না যে আমি তোমাকে ঘৃণা করবো! আমার তো আরো মনে হয় আমার কথা শুনলে আমাকেই আরো ঘৃণা করবে তুমি।
- মেঘ!!!
- হ্যা রোদ্দুর। তুমি জানো আমি শিওর না যে আমার বাবা আসলে কে। অবাক হচ্ছো তাইনা? ছোট থেকেই দেখেছি উদ্যোম মেলামেশা চলে আমার বাড়িতে। এমন একটা পরিবেশে বড় হয়েছি তুমি ভাবতে পারো রোদ্দুর!! আমার মা বাবা নানা নানি কারো মধ্যে কোনো আড়াল ছিলোনা!!! রোদ্দুর তোমার বাবা মায়ের মধ্যে যে ভালোবাসা ছিলো তার ছিটেফোঁটাও ছিলোনা এদের মধ্যে। কেবল দেহের তাড়নায় পশুর মতো আচরণ করতো এরা। বলতে বলতে ঘৃণায় বেকে ওঠে মেঘের সুন্দর মুখটা। premer golpo
- থাক মেঘ.
রোদ্দুর কথা শুরু করতেই হাত তুলে থামিয়ে দেয় মেঘ।
- না রোদ্দুর! থামালে হবে না, আজকে সব কিছু শুনতেই হবে তোমাকে। তবে কি জানো ভালো হতে চেয়েছিল আমার মা! কিন্তু পারেনি বাবার জন্য। ওই লোকটা ভালো হতে দেয়নি মাকে। এমনকি আমি বড় হতেই তার লালসার চোখ আমার ওপরেও পরে।
- মেঘ!!!
- হ্যা রোদ্দুর। আমি ক্লাস এইট এ উঠতেই বাবা নানা ছলে গায়ে হাত দিতো আমার!! তখন না বুঝলেও এখন বুঝি যে মা ওই সময়টাতে আগলে রাখতো আমায়। কিন্তু এতে করে বাবার সব রাগ গিয়ে পরে মায়ের ওপর। সীমাহীন শারীরিক আর মানসিক অত্যাচার এ ভেঙে পরে মা। এক সময় অত্যাচার সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
মেঘের দুচোখের কোন চিকচিক করছে জলে। রোদ্দুর আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে মেঘের। নিজেকে সামলে নিয়ে আবারো বলতে শুরু করে মেঘ । premer golpo
- মায়ের মৃত্যতে বদলে গেলো আমার নানা আর নানী। কিছুদিন এর মধ্যে আমার নানীও মারা যায়। আর নানা আশ্রয় খুঁজে নেয় কোনার একটা ঘরে। সারাক্ষণ ওই ঘরটাতেই সেচ্ছাবন্দী থাকেন তিনি। কথা বলেনা কারো সাথে। একদম একা হয়ে গেলাম আমি।
নিজের অজান্তেই একটা হাত বারিয়ে মেঘকে নিজের দিকে টেনে নেয় রোদ্দুর। আকাশ টাও তখন ছেয়ে গেছে কালো রঙের মেঘে। বৃষ্টি নামবে যে কোনো সময়।
- ওই বয়সে একা আমি কি আর করতে পারতাম বলো?? ক্লাস নাইনে পড়া অবস্থায় প্রথম ধর্ষণ এর স্বীকার হই আমি রোদ্দুর তাও নিজের বাবার কাছে!!! কি রোদ্দুর এবারে ঘৃনা হচ্ছে আমার ওপর তাইনা??
তখন জলের ধারা গরিয়ে নামছে মেঘের দুগাল বেয়ে। হাত বারিয়ে সেই জল মুছে দিলো রোদ্দুর।
- না মেঘ আরো আপন মনে হচ্ছে।
- রোদ্দুর!!
- হ্যা মেঘ। premer golpo
- জানো আমি তোমাকে ভালোবাসি? অনেক দিন হলো ভালোবাসি। কিন্তু বলতে পারিনি কারন আমি এক ধর্ষিত মেয়ে!!!
- না মেঘ আমার কাছে তুমি পবিত্র। বাগানে ফুটে থাকা গোলাপ এর মতোই পবিত্র তুমি।
রোদ্দুর এর কথায় কান্নার ঢল নামে মেঘের দুচোখে। পাশ থেকে রোদ্দুর কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে হাওমাও করে। বাধা দেয়না রোদ্দুর। কাদুক মেয়েটা। কাঁদলে মন অনেক হালকা হয়। কান্নার দমকে কেঁপে কেঁপে উঠছে মেঘের শরীর। রোদ্দুর হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মেঘের পিঠে। এমন সময় কেঁদে ওঠে আকাশের মেঘ ও। ঝুম বৃষ্টি নেমে ভিজিয়ে দেয় দুজনকে। অনেক দিন হলো যেন কাঁদতেও ভুলে গেছে মেঘ। আজ কাঁদছে মন ভরে। premer golpo
ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে
- জানো রোদ্দুর অনেক বার ভেবেছি আত্মহত্যার কথা। কিন্তু পারিনি। ভেবেছি কি হবে এই জীবন দিয়ে? আমার মা ও তো ওই পথ বেছে নিয়েছিলো, সমাধান তো হয়নি। সেদিন ই প্রতিজ্ঞা করেছি আমার না, বরং ওই লোকের কোনো অধিকার নেই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার। একদিন না একদিন আমার হাতে মরবে আমার বাবা নামের ওই জঘন্য পশুটা।
একটানা ঝরে চলেছে বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিতে এক সাথে ভিজছে রোদ্দুর আর মেঘ। এই বৃষ্টি যেন ধুয়ে মুছে দিচ্ছে ওদের দুজনের মধ্যকার সমস্ত দূরত্ব। (চলবে.)
ঠিক যেন লাভস্টোরী টু - 8
Related posts: