best bangla golpo choti. ঘর না হয় তবু ঠিক হলো,কিন্তু খাবে কি? সৃজনকে ঘরের মধ্যে রেখে বেরিয়ে যায় সৃষ্টি। বস্তির ভেতরেই রেল লাইন এর পাশে একটা মার্কেট এর মতো আছে। কিন্তু ওর কাছেতো টাকা দুই হাজার এর ও কম। অবশ্য মোবাইলটা আছে। সৃষ্টির মনে পরে গত জন্মদিনে ওর বাবা ওঁকে একটা আইফোন গিফট করেছিলো, তা দেখে সেই কি মন খারাপ সৃজন এর, শেষমেশ সৃজনকে আইফোনটা দিয়ে ওর পুরনো স্যামসাং টা নিয়েছিলো সৃষ্টি। এক্সিডেন্ট এর সাথে সাথেই হারিয়ে গেছে সৃজন এর আইফোনটা।
পুরোনো কথা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে সৃষ্টির বুক চিরে। সেইসব দিনগুলো এখন কেবলি স্মৃতি। মার্কেটে ঢুকে মোবাইলটা আর ওর কানের দুল মিলিয়ে বিক্রি করে পায় পনেরো হাজার টাকার মতো। তা দিয়েই ঘরের মাচান এর বিছানার জন্য একটা তোষক, একটা চাদর আর দুইটা বালিশ কেনে সৃষ্টি। এছাড়াও ঘরের প্রয়োজনীয় হাড়ি, পাতিল,থালা,বাসন, আয়না, চিরুনি, চাল, ডাল, নুন, মশলা সব কিছু কিনতেই বেরিয়ে যায় দশ হাজার টাকার মতো।
best bangla golpo
মার্কেট থেকে বেরুনোর সময়ে মনে পরে আজ গোসল শেষে কি পরবে এমন কাপড় ও ওদের নেই। সেশমেষ সস্তায় সৃজন এর জন্য দুইটা ট্রাউজার আর টি শার্ট আর ওর নিজের জন্য সস্তার ফুলওয়ালা প্রিন্ট এর দুটি সালোয়ার কামিজ কিনে ফিরে আসে সৃষ্টি। ঘরে এসে নিরবেই মাচান টার ওপরে তোশক ফেলে চাদর বিছিয়ে বিছানা করে ফেলে সৃষ্টি। কিনে আনা ছোট্ট মুখ দেখা আয়নাটা টানিয়ে দেয় ঘরের ভেতরে দেয়ালে পোতা একটা পেরেক এর সাথে। ঘর মোটামুটি গোছগাছ করে বেরিয়ে আসে সৃষ্টি।
মনে পরে একদিন এর বেশি সময় ধরে না খেয়ে আছে ওরা। নতুন কেনা হাড়ি পাতিল নিয়ে সৃষ্টি এগিয়ে যায় উঠোনের মাটির চুলাটার দিকে। নিরবেই মানিয়ে নিতে চায় নিজেকে নতুন পরিস্থিতির সাথে। আজ পর্যন্ত কখনো মাটির উনুনে রাধেনি সৃষ্টি। চুলা জ্বালাতে গেলে ধোয়ায় ভরে যায় চারপাশ। চোখে মুখে ধোঁয়া ঢুকে জল বেরিয়ে আসছে ওর চোখ দিয়ে, তার পরেও হাল ছাড়েনা ও। ছোট বেলা থেকেই জেদি মেয়ে সৃষ্টি। কখনো হার মানতে শেখেনি,হার সে মানবেও না। অনেক ক্ষন এর চেষ্টাতে চুলা জ্বালাতে সক্ষম হয় ও। best bangla golpo
চুলা ধরিয়ে হাড়িতে ভাত ফুটতে দেয় ও। ভাতে দেয় তিন চারটি আলু। নিরবে বারান্দায় হুইলচেয়ারটাতে বসে বসে বোনের কাজ দেখতে থাকে সৃজন। গতকাল রাত এর পর থেকে এখন পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি ও। ঘটনার আকস্মিকতায় যেন বোবা হয়ে গেছে একেবারে। ভাতটা ফুটে গেলে ভাত নামিয়ে তেল, নুন, পেয়াজ আর শুকনো মরিচ দিয়ে আলু চটকে নেয় সৃষ্টি। ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত একটা প্লেট এ নিয়ে আলু ভর্তা দিয়ে মাখিয়ে নিয়ে যায় সৃজন এর কাছে।
সদ্য কিনে আনা প্লাস্টিকের টুলটা পেতে সৃষ্টি বসে পরে সৃজন এর পাশে। ভাত খায়িয়ে দিতে থাকে ভাইকে। সৃজন ও নিরবে কোনো কথা না বলে খেতে থাকে বোনের হাত থেকে। সৃষ্টিও সৃজনকে খাওয়াতে খাওয়াতে মাঝে মাঝে দুই একবার নেয় নিজের মুখেও। নিরবে জল গড়াতে থাকে ওর দু চোখের কোন বেয়ে। সৃজন কেবলই ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। best bangla golpo
এদিকে সকালে ঘুম ভেঙে যায় চম্পা রানীর। ঘুম ভাঙতেই ড্রইংরুমের ফ্লোরে নিজেকে নগ্ন আবিষ্কার করে বিস্মিত হয়ে ওঠে। আস্তে আস্তে একে একে মনে পরতে থাকে গতরাতের ঘটনা। তাকিয়ে দেখে তাকে প্রায় জড়িয়ে আছে রবিউল হাসান। নাভির নিচে আট ইঞ্চি বাড়াটা নেতিয়ে পরে ল্যাকপ্যাক করে ঝুলছে যেন। ওইদিকে বাপ মেয়ে একে অন্যকে কষে জড়িয়ে ধরে আছে। নগ্ম সবাই। গত রাতে নিজের নির্লজ্জতার কথা মনে পরতেই গলা শুকিয়ে আসে চম্পা রানীর। আস্তে আস্তে উঠে বসে।
নিজে উঠে বসতেই দেখে চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে রবিউল হাসান। রবিউলকে তাকাতে দেখেই নাইটিটা টেনে নিয়ে নগ্ন বুক ঢাকার চেষ্টা করে চম্পা রানী। চম্পা রানীর অবস্থা দেখে মুচকি হাসে রবিউল হাসান। রবিউলকে ওভারে হাসতে দেখে তরিঘরি করে উঠে থলথলে পাছা দুলিয়ে থপ থপ করে সিড়ি ভেঙ্গে ওপরে উঠতে থাকে চম্পা রানী আর পেছন থেকে রবিউল ঠোঁট চাটতে চাটতে দেখতে থাকে নগ্ন মাংসল পাছার উদ্যম ওঠানামা। একে একে ঘুম থেকে উঠে পরে সবাই। best bangla golpo
ফ্রেশ হয়ে কাপড় চোপড় পরে নিয়ে রবিউল এর গাড়িতে করে বেরিয়ে পরে হাসপাতাল এর উদ্দেশ্যে। গতকাল রাতের ঘটনায় কেমন যেন আড়ষ্ট হয়ে আছে সবাই। হাসপাতালের পার্কিং লটে গাড়ি পার্ক করে ভেতরে ঢুকে পরে রবিউল। পেছন পেছন আসে বাকি তিনজন। রিসিপশন ডেস্কে যেতেই শুনতে পারে চিড়িয়া উধাও। রাগে নিজের মাথার চুল ভিড়বার যোগাড় হয় রবিউল হাসান এর। মনে মনে বলে তার মানে ওই শালী মাগিটা সবাই জানতে পেরেছিল, আমাদের এখান থেকে সরিয়ে দিয়েই ভেগেছে।
তার এত্তো দিন ধরে সাজানো প্ল্যান ভেস্তে যাচ্ছে দেখে রাগে ফেটে পরে রবিউল। সৃষ্টি মাগি তোর রেহাই নেই আমার হাত থেকে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাস না কেন পার পাবিনা তুই। মরিয়া হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে বেরিয়ে আসে ওরা। বাসায় ফিরে সাম্ভাব্য সব জায়গাতেই খোঁজ নেয় রবিউল, কিন্তু কোনো খোঁজ নেই সৃজন আর সৃষ্টির। মনে হয় ঠিক যেন কর্পুর এর মতো উবে গেছে দুই ভাইবোন। best bangla golpo
রাত নেমেছে ঘিঞ্জি বস্তিতে। রাত নয়টা এখানে অনেক রাত। বেশির ভাগ ঘরগুলোতেই বাতি নেভানো। মাঝে মাঝে কোনো কোনো ঘর থেকে ভেসে আসছে বাচ্চাদের চিৎকার চেচামেচি, কান্না, বড়দের নোংরা খিস্তি ঝেরে গালাগাল। আস্তে আস্তে সেগুলোও সব থেমে আসছে। কোলাহল থেমে নিঝুম নিস্তব্ধতা নেমে আসছে চারপাশে। এখন কেবল মাঝে মাঝে বাইরে দুই একটা কুকুর এর ঘেউঘেউ আওয়াজ ছাড়া অন্য কোনো আওয়াজ আসছে না। বালিশে মাথা ঠেকিয়ে নিরবে শুয়ে আছে দুই ভাইবোন।
সৃষ্টি উদাস চোখে তাকিয়ে আছে ঘরের ওপর এর টিনের চালার কড়ি-বর্গার দিকে। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে ঘুমিয়ে গেছে সৃজন। ঘুমের ঘোরে কি নিষ্পাপ লাগছে ওকে দেখতে। এখানে এসে মাথা আর হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ফেলেছে ও। পায়ের টা এখনো আছে। একরাশ অবাধ্য চুল এসে ছড়িয়ে আছে কপাল জুড়ে।
সৃষ্টি অপলক তাকিয়ে থাকে ভাই এর নিষ্পাপ মুখের দিকে। এক হাতে কপাল এর ওপরকার চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে ঠোঁট ছুয়ে দেয় ভাই এর কপালের ওপরে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারও চিৎ হয়ে শুয়ে পরে ও। best bangla golpo
ভাবতে থাকে ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। সব কিছু কিনে এখন মাত্র হাজার চারেক এর মতো টাকা আছে হাতে। এ দিয়ে না হয় কোনোভাবে কষ্ট করে এই মাসটা চলা যাবে, কিন্তু তারপর? কিভাবে চলবে? যে করেই হোক একটা না একটা কাজ জোটাতেই হবে। বস্তির কেউ ওদের আসল সম্পর্ক জানে না। সকলেই জানে যে ওরা স্বামী-স্ত্রী। সৃজনকে সাবধান করতে হবে ও যেন আবার সবার সামনে আপু ডেকে না বসে!! যদিও সৃজন এর মুখে আপু ডাক শুনতেই বেশি ভালোবাসে ও তবে সবার সামনে তো আর তা ডাকা যাবেনা।
এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই কখন যেন ঘুম নেমে আসে ওর দুচোখে। এসব বস্তি এলাকাগুলোতে যেমন রাত নেমে আসে তাড়াতাড়ি তেমনি সকাল ও হয় তাড়াতাড়ি। কাকডাকা ভোরেই চারদিককার চিৎকার চেচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায় সৃষ্টির। সৃজন এর দিকে চেয়ে দেখে এখনো ঘুমোচ্ছে ও। আস্তে করে সৃজন এর ঘুম না ভাঙিয়ে উঠে যায় সৃষ্টি। পুরো এই বস্তিজুড়ে কল আছে মাত্র পাঁচটা। বালতিটা নিয়ে কলতলায় যেতেই দেখে পানির জন্য লম্বা লাইন লেগে গেছে। best bangla golpo
লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় বিশ মিনিট পরে পানি পায় সৃষ্টি। ভরা পানির বালতি বয়ে আনতে অনেক কষ্ট হয় ওর। পানি এনে দেখে সৃজন উঠে বসে আছে। বারান্দায় বালতিটা নামিয়ে রেখে ঘরে ঢোকে সৃষ্টি।
- কিরে ভাই? কখন উঠলি?
- অনেকক্ষণ। কই গিয়েছিলি আপু?
- পানি আনতে। চল হাতমুখ ধুবি।
সৃজনকে ধরে ধরে বাইরে নিয়ে আসে সৃষ্টি। হুইলচেয়ার এ বসিয়ে যত্ন করে হাত মুখ ধুয়িয়ে দিতে দিতে বলে শোন এখানকার সবাই কিন্তু জানে যে আমরা স্বামী-স্ত্রী। কারো সামনে যেন আবার আমাকে আপু করে ডাকিসনা। সৃজন কোনো কথা বলেনা। হাতমুখ ধোঁয়া শেষ করে যখন সবে চুলোটা জ্বালিয়েছে এমন সময়ে ওদের এখানে আসে কালকের সাহায্যকারী সেই মহিলা। সৃষ্টিকে চুলা ধরাতে দেখে বলে আহারে কি কষ্ট তোমাগো, সৃষ্টির নরম কোমল হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলে এই হাত কি কাম করনের হাত? best bangla golpo
দেইখাই বুজা যায় রড়লোক মাইনষের বেটি আছিলা। সৃষ্টি কিছু না বলে কেবল নীচদিক তাকিয়ে থাকে। মহিলা আবার বলে
- তা এইহানে যে আইছো খাইবা কি কইরা? খাওন দাওন এর একটা ব্যাবস্থা তো করন লাগবো?
সৃষ্টি যেন আশার আলো দেখতে পায়। মহিলার দুই হাত আকড়ে ধরে বলে
- ভাবি আমাকে একটা কাজ জুটিয়ে দিন না! যে কোনো কাজ। আমি সব করতে পারি সত্যি। একটা কাজ এর খুব দরকার আমার।
মহিলা কিছুক্ষণ ভেবে বলে তুমারে তো যে সে কাম দেওন যাইবো না, খাড়াও আমি এলাকার কুমিশনার সাব এর বাড়িত কাম করি। কুমিশনার সাব এই বস্তির পোলাপাইনগো জন্যে একখান ইস্কুল খুইল্যা দিছে। দেহি তারে কইয়া তুমারে ওইহানে ঢুকাইবার পারি নাকি।
সৃষ্টি বলে তাহলে তো ভাবি অনেক ভালো হয়।
সত্যিই মহিলাটা অনেক ভাল পরদিনই সৃষ্টিকে নিয়ে যায় কমিশনার এর বাসায়। কমিশনার সব শুনে চাকরি দিতে রাজি হয় সৃষ্টিকে। বস্তির স্কুল, মাস গেলে আট হাজার টাকা বেতন। সৃষ্টি রাজি হয়ে যায় তাতেই। best bangla golpo
যাক একটা ভাবনাতো অন্ততো দুর হলো। আগের কথা ভাবতে থাকে সৃষ্টি ওদের দুই ভাইবোনকে বাবা হাত খরচ ই দিতো দশ হাজার দশ হাজার করে বিশ হাজার টাকা। অবশ্য মাস শেষে দেখা যেত এক হাজারো খরচ হয়নি সৃষ্টির, বাকি টাকাটাও বাবা মায়ের আলক্ষে তুলে দিত ও ছোট ভাইটার হাতে।
আর এখন এই আট হাজার টাকার তিন হাজার বাড়ি ভাড়া দিয়ে বাকি পাঁচ হাজারে পুরো মাস চালিয়ে নিতে হবে!! বাড়ি ফিরে সৃজনকে চাকরির কথা জানায় সৃষ্টি। সৃজন কিছুই বলতে পারে না। কি বলবে ও? এই অক্ষম পা নিয়ে কিই বা বলবার আছে?
এদিকে সৃষ্টি সৃজনকে খুঁজে না পেয়ে পাগলা কুত্তা হয়ে উঠেছে রবিউল হাসান। কত্তো সুন্দর প্ল্যান ছিলো ওর। মারুফ মেম্বার এর সাথে মিলে মামুন সাহেবকে পরিবারসহ দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবে। তারপর বিয়ে করবে সৃষ্টিকে। সৃষ্টিকে বিয়ে করে সব কিছুর একছত্র মালিক হবে ও। তখন মারুফ মেম্বার কে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়া কোনো ব্যাপার ছিলোনা, কিন্তু এখন? ইচ্ছা করলে মারুফ মেম্বার ই যেকোনো সময় ল্যাং মেরে ফেলে দিতে পারে তাকে। না না এটা কিছুতেই হতে দেয়া যায়না। best bangla golpo
বেনসন এন্ড হেজেছ ঠোটে ঝুলিয়ে বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিতে থাকে রবিউল হাসান। হ্যা উপায় পেয়ে গেছে সে। মামুন সাহেবদের সবার অনুপস্থিতিতে এসব বিষয় সম্পত্তি সব এখন মারুফ মেম্বার এর। আর মারুফ মেম্বার এর একমাত্র উত্তোরাধীকারী হলো মনি! হ্যা মনি, মনিকে বিয়ে করবে ও। তাহলেই কেবল এ সম্পত্তি তার মুঠো গলে বেরিয়ে যাবার চান্স পাবেনা। মারুফ মেম্বার এর কাছে গিয়ে মনিকে বিয়ের প্রস্তাব দিতেই এক কথায় রাজি হয়ে যায় মারুফ মেম্বার।
তার কারন সে ঠিকি বুঝেছে এতো সব বিষয় সম্পত্তি একা হাতে সামাল দেয়া তার কর্ম নয়। রবিউল যদি তার জামাই হয় তাহলে শশুর জামাই মিলে এসব দেখাশোনা করা কোনো ব্যাপার ই না। শুরু হয়ে যায় বিয়ের তোড়জোড়। আর এদিকে সৃষ্টি রোজ স্কুলে যাওয়া আসা শুরু করেছে। খুব একটা কষ্ট না, কাছেই স্কুল। যেতে হয় সকাল দশটায়, আবার তিনটার মধ্যেই ফিরতে পারে। সৃজন এর পায়ের ব্যান্ডেজটা খোলা দরকার। সেদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় সাথে করে বস্তির একমাত্র ডাক্তারকে নিয়ে আসে সৃষ্টি। best bangla golpo
ডাক্তার এসে খুলে দেয় ব্যান্ডেজ। পা টা কেমন যেন নেতিয়ে আছে। কোমড় এর কাছ থেকে ঝুলছে অসড়ভাবে। সৃষ্টির ওই পা টার দিকে তাকাতেই কান্না পায়। অন্য দিকে তাকিয়ে ওড়নায় চোখ মুছতে থাকে। কিন্তু সৃজন নির্বিকার। ও ওর জীবনের চরম নিষ্ঠুর বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েছে। ডাক্তারকে নিয়ে ফেরার সময়ে সাথে করে দুটো ক্র্যাচ কিনে এনেছে সৃষ্টি। ক্র্যাচ দুটো হাতে তুলে নিয়ে সামান্য মুচকি হাসে সৃজন। এ দুটোই এখন ওর সারা জীবনের সার্বক্ষণিক সঙ্গী!! বগলে ক্র্যাচ লাগিয়ে কিছুক্ষন হেটে দেখে সৃজন।
না খুব একটা কষ্ট না হাটা। মনে হয় যেন কতো দিন পর সৃষ্টির সাহায্য ছাড়া একা একা দাড়াতে পারছে!! ডাক্তার বেরিয়ে যেতেই ক্র্যাচ হাতে ভাইকে দেখে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না সৃষ্টি। ভাইকে জড়িয়ে হুহু করে কাঁদতে থাকে। বোনেত খোলা চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে সৃজন। এই পাগলি কাঁদছিস কেন?
আমার তো কোনো অসুবিধা হচ্ছে না, এই দেখনা কেমন দিব্যি হাটতে পারছি এখন। সৃষ্টি ভাইকে ছাড়েনা, জোরে জড়িয়ে ধরে রাখে নিজের বুকে। সারা জীবন ও এভাবেই আগলে রাখবে ওর ভাইকে। best bangla golpo
কক্ষনও কোনো বিপদকে ছুতে দেবেনা। সৃষ্টি সৃজন বস্তিতে থাকলেও ওড়া যেন সবার থেকে আলাদা। প্রতিদিন বস্তির কোনো না কোনো ঘরে ঝগড়া লেগেই আছে আছো প্রায় এক মাস হতে চললো কেউ কখনো ওদের দুজন এর ঘর থেকে একটু জোরে কথাও শোনেনি। সবাই ওদের একটু আলাদা সম্মানের চোখেই দেখে। বাচ্চাদের স্কুলে পড়ায় বলে আশপাশের সবাই সৃষ্টিকে ডাকে মাষ্টারনী বলে।
শুনতে খুব একটা খারাপ ও লাগেনা সৃষ্টির। পাশের বাড়ির ভাবিটা তো প্রায়ই সৃজনকে বলে বুঝলা মিয়া ভাইগ্যগুনে মাষ্টারনীর লাহান একটা বউ পাইছো। এরম বউ লাখে একটা। মিলে না। শুনে কেবল মুচকি হাসে সৃজন। সত্যিই তো ওর বোনটার মতো করে ভালোবাসতে পারে আর কয়জন??
বিয়ের দিনক্ষণ পাকা হয়ে গেছে রবিউল আর মনির। কেনাকাটা নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছে সবাই। সৃষ্টির ঘরটা নিজের জন্য দখল করেছে মনি। আপাতত বিয়ের আগ পর্যন্ত সৃজন এর ঘরটাতেই থাকছে রবিউল। আর মামুন সাহেব এর বেডরুম এখন মারুফ মেম্বার এর দখলে। best bangla golpo
থেমে নেই সৃজন সৃষ্টির জীবন ও। আস্তে আস্তে ওরাও অভ্যস্ত হয়ে উঠছে এই জীবনটার সাথে। এই বস্তিজীবন এ এসে সৃষ্টি অনুভব করতে পারছে ভালোবাসার কাছে আসলে টাকা পয়সা বিষয় সম্পত্তি সব ই তুচ্ছ। এই অনিশ্চিত জীবনের মাঝেও ভালোবাসার আলাদা একটা অনুভুতি আছে। মূলত ভালোবাসাটা হলো সার্বজনীন। সেদিন সকালে সৃষ্টির স্কুলে একটা মিটিং আছে। এ জন্য তারাতারি করে রান্নাবান্না শেষ করে সৃজনকে খায়িয়ে বেরিয়ে যায় সৃষ্টি। সৃষ্টি চলে যাবার পরে সময়টা একাই কাটে সৃজন এর।
সৃষ্টি জানে সৃজন কেমন বই এর পোকা। এ জন্য স্কুল থেকে আর পুরোনো লাইব্রেরী থেকে বেশ কিছু বই এনে দিয়েছে ওকে। অগুলো পড়তে পড়তে দিব্যি সময় কেটে যায়। সৃষ্টি ওর স্কুলের বাচ্চা আর টিচার সবার কাছেই অল্প দিনেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টিচারদের মধ্যে ওর বয়স ই সবচেয়ে কম। সবাও ওকে অনেক আদর করে, বিশেষ করে হেড মিস্ট্রেস এর কাছেতো এখন সৃষ্টি সবচেয়ে প্রিয়। সেদিনকার মিটিং এ স্কুল কমিটির কাছে সব টিচাররাই সৃষ্টির অনেক প্রশংসা করে। best bangla golpo
সৃষ্টি সবার প্রশংসা শুনে কেবল একটু লাজুক হাসে। মিটিং শেষ হলে সব টিচারদের জন্য সেদিন নাস্তার ব্যাবস্থা করা হয়। একটা করে মিষ্টি, সমুচা আর সিঙ্গারা। প্যাকেট খুলে মুখে দিতে গেলেই সৃষ্টির মনে পরে যায় সৃজন এর কথা। আর মুখে ওঠে না ওর। প্যাকেটটা আবার মুরে ঢুকিয়ে নেয় সাইড ব্যাগটায়। হেড মিস্ট্রেস খেয়াল করে বলে কি ব্যাপার সৃষ্টি ল? তুমি খেলে না যে?
- আসলে ম্যাম আমার গ্যাসের প্রবলেম তো একটু, আজ সকালে অষুধ খেতে ভুলে গেছি এখন এগুলা খেলে আমাকে আর দেখতে হবে না।
হেড মিস্ট্রেস আদরের হাত বুলিয়ে দেয় সৃষ্টির গালে। সত্যি তুমি খুব মিষ্টি একটা মেয়ে।
বাড়ি ফিরে সৃষ্টি প্যাকেট টা দেয় সৃজন এর হাতে।
- কি এটা আপু?
- খুলে দেখ কি?
- আরে সমুচা সিঙ্গারা বাহহ অনেকদিন পর। best bangla golpo
প্যাকেট থেকে বের করে খেতে নিয়ে বোনের কথা মনে পরে সৃজন এর। আমার জন্য এনেছিস তুই খাসনি?
- আমি খেয়েছি ভাই। এটা তোর জন্য। তুই খা।
সৃজন জানে সৃষ্টি না খেয়ে ওর জন্য এনেছে। সিঙ্গারাটা ভেঙে নিজে মুখে দিয়ে একটা অংশ নিজের হাতে তুলে দেয় বোনের মুখে।
ভাই এর ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে সৃষ্টি সিঙ্গারা টা চিবোতে চিবোতে কেঁদে ফেলে। বোনের চোখের জল দেখে মুচড়ে ওঠে সৃজন এর ভেতরটাও। ওর চোখ দুটোও ঝাপসা হয়ে আসে। তারাতারি করে অন্য দিকে তাকায় সৃজন, কেননা ছেলে মানুষ এর চোখে জল যে বড্ড বেমানান! (চলবে.)
ঠিক যেন লাভস্টোরী - 15
Related posts:
পুরোনো কথা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে সৃষ্টির বুক চিরে। সেইসব দিনগুলো এখন কেবলি স্মৃতি। মার্কেটে ঢুকে মোবাইলটা আর ওর কানের দুল মিলিয়ে বিক্রি করে পায় পনেরো হাজার টাকার মতো। তা দিয়েই ঘরের মাচান এর বিছানার জন্য একটা তোষক, একটা চাদর আর দুইটা বালিশ কেনে সৃষ্টি। এছাড়াও ঘরের প্রয়োজনীয় হাড়ি, পাতিল,থালা,বাসন, আয়না, চিরুনি, চাল, ডাল, নুন, মশলা সব কিছু কিনতেই বেরিয়ে যায় দশ হাজার টাকার মতো।
best bangla golpo
মার্কেট থেকে বেরুনোর সময়ে মনে পরে আজ গোসল শেষে কি পরবে এমন কাপড় ও ওদের নেই। সেশমেষ সস্তায় সৃজন এর জন্য দুইটা ট্রাউজার আর টি শার্ট আর ওর নিজের জন্য সস্তার ফুলওয়ালা প্রিন্ট এর দুটি সালোয়ার কামিজ কিনে ফিরে আসে সৃষ্টি। ঘরে এসে নিরবেই মাচান টার ওপরে তোশক ফেলে চাদর বিছিয়ে বিছানা করে ফেলে সৃষ্টি। কিনে আনা ছোট্ট মুখ দেখা আয়নাটা টানিয়ে দেয় ঘরের ভেতরে দেয়ালে পোতা একটা পেরেক এর সাথে। ঘর মোটামুটি গোছগাছ করে বেরিয়ে আসে সৃষ্টি।
মনে পরে একদিন এর বেশি সময় ধরে না খেয়ে আছে ওরা। নতুন কেনা হাড়ি পাতিল নিয়ে সৃষ্টি এগিয়ে যায় উঠোনের মাটির চুলাটার দিকে। নিরবেই মানিয়ে নিতে চায় নিজেকে নতুন পরিস্থিতির সাথে। আজ পর্যন্ত কখনো মাটির উনুনে রাধেনি সৃষ্টি। চুলা জ্বালাতে গেলে ধোয়ায় ভরে যায় চারপাশ। চোখে মুখে ধোঁয়া ঢুকে জল বেরিয়ে আসছে ওর চোখ দিয়ে, তার পরেও হাল ছাড়েনা ও। ছোট বেলা থেকেই জেদি মেয়ে সৃষ্টি। কখনো হার মানতে শেখেনি,হার সে মানবেও না। অনেক ক্ষন এর চেষ্টাতে চুলা জ্বালাতে সক্ষম হয় ও। best bangla golpo
চুলা ধরিয়ে হাড়িতে ভাত ফুটতে দেয় ও। ভাতে দেয় তিন চারটি আলু। নিরবে বারান্দায় হুইলচেয়ারটাতে বসে বসে বোনের কাজ দেখতে থাকে সৃজন। গতকাল রাত এর পর থেকে এখন পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি ও। ঘটনার আকস্মিকতায় যেন বোবা হয়ে গেছে একেবারে। ভাতটা ফুটে গেলে ভাত নামিয়ে তেল, নুন, পেয়াজ আর শুকনো মরিচ দিয়ে আলু চটকে নেয় সৃষ্টি। ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত একটা প্লেট এ নিয়ে আলু ভর্তা দিয়ে মাখিয়ে নিয়ে যায় সৃজন এর কাছে।
সদ্য কিনে আনা প্লাস্টিকের টুলটা পেতে সৃষ্টি বসে পরে সৃজন এর পাশে। ভাত খায়িয়ে দিতে থাকে ভাইকে। সৃজন ও নিরবে কোনো কথা না বলে খেতে থাকে বোনের হাত থেকে। সৃষ্টিও সৃজনকে খাওয়াতে খাওয়াতে মাঝে মাঝে দুই একবার নেয় নিজের মুখেও। নিরবে জল গড়াতে থাকে ওর দু চোখের কোন বেয়ে। সৃজন কেবলই ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। best bangla golpo
এদিকে সকালে ঘুম ভেঙে যায় চম্পা রানীর। ঘুম ভাঙতেই ড্রইংরুমের ফ্লোরে নিজেকে নগ্ন আবিষ্কার করে বিস্মিত হয়ে ওঠে। আস্তে আস্তে একে একে মনে পরতে থাকে গতরাতের ঘটনা। তাকিয়ে দেখে তাকে প্রায় জড়িয়ে আছে রবিউল হাসান। নাভির নিচে আট ইঞ্চি বাড়াটা নেতিয়ে পরে ল্যাকপ্যাক করে ঝুলছে যেন। ওইদিকে বাপ মেয়ে একে অন্যকে কষে জড়িয়ে ধরে আছে। নগ্ম সবাই। গত রাতে নিজের নির্লজ্জতার কথা মনে পরতেই গলা শুকিয়ে আসে চম্পা রানীর। আস্তে আস্তে উঠে বসে।
নিজে উঠে বসতেই দেখে চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে রবিউল হাসান। রবিউলকে তাকাতে দেখেই নাইটিটা টেনে নিয়ে নগ্ন বুক ঢাকার চেষ্টা করে চম্পা রানী। চম্পা রানীর অবস্থা দেখে মুচকি হাসে রবিউল হাসান। রবিউলকে ওভারে হাসতে দেখে তরিঘরি করে উঠে থলথলে পাছা দুলিয়ে থপ থপ করে সিড়ি ভেঙ্গে ওপরে উঠতে থাকে চম্পা রানী আর পেছন থেকে রবিউল ঠোঁট চাটতে চাটতে দেখতে থাকে নগ্ন মাংসল পাছার উদ্যম ওঠানামা। একে একে ঘুম থেকে উঠে পরে সবাই। best bangla golpo
ফ্রেশ হয়ে কাপড় চোপড় পরে নিয়ে রবিউল এর গাড়িতে করে বেরিয়ে পরে হাসপাতাল এর উদ্দেশ্যে। গতকাল রাতের ঘটনায় কেমন যেন আড়ষ্ট হয়ে আছে সবাই। হাসপাতালের পার্কিং লটে গাড়ি পার্ক করে ভেতরে ঢুকে পরে রবিউল। পেছন পেছন আসে বাকি তিনজন। রিসিপশন ডেস্কে যেতেই শুনতে পারে চিড়িয়া উধাও। রাগে নিজের মাথার চুল ভিড়বার যোগাড় হয় রবিউল হাসান এর। মনে মনে বলে তার মানে ওই শালী মাগিটা সবাই জানতে পেরেছিল, আমাদের এখান থেকে সরিয়ে দিয়েই ভেগেছে।
তার এত্তো দিন ধরে সাজানো প্ল্যান ভেস্তে যাচ্ছে দেখে রাগে ফেটে পরে রবিউল। সৃষ্টি মাগি তোর রেহাই নেই আমার হাত থেকে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাস না কেন পার পাবিনা তুই। মরিয়া হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে বেরিয়ে আসে ওরা। বাসায় ফিরে সাম্ভাব্য সব জায়গাতেই খোঁজ নেয় রবিউল, কিন্তু কোনো খোঁজ নেই সৃজন আর সৃষ্টির। মনে হয় ঠিক যেন কর্পুর এর মতো উবে গেছে দুই ভাইবোন। best bangla golpo
রাত নেমেছে ঘিঞ্জি বস্তিতে। রাত নয়টা এখানে অনেক রাত। বেশির ভাগ ঘরগুলোতেই বাতি নেভানো। মাঝে মাঝে কোনো কোনো ঘর থেকে ভেসে আসছে বাচ্চাদের চিৎকার চেচামেচি, কান্না, বড়দের নোংরা খিস্তি ঝেরে গালাগাল। আস্তে আস্তে সেগুলোও সব থেমে আসছে। কোলাহল থেমে নিঝুম নিস্তব্ধতা নেমে আসছে চারপাশে। এখন কেবল মাঝে মাঝে বাইরে দুই একটা কুকুর এর ঘেউঘেউ আওয়াজ ছাড়া অন্য কোনো আওয়াজ আসছে না। বালিশে মাথা ঠেকিয়ে নিরবে শুয়ে আছে দুই ভাইবোন।
সৃষ্টি উদাস চোখে তাকিয়ে আছে ঘরের ওপর এর টিনের চালার কড়ি-বর্গার দিকে। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে ঘুমিয়ে গেছে সৃজন। ঘুমের ঘোরে কি নিষ্পাপ লাগছে ওকে দেখতে। এখানে এসে মাথা আর হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ফেলেছে ও। পায়ের টা এখনো আছে। একরাশ অবাধ্য চুল এসে ছড়িয়ে আছে কপাল জুড়ে।
সৃষ্টি অপলক তাকিয়ে থাকে ভাই এর নিষ্পাপ মুখের দিকে। এক হাতে কপাল এর ওপরকার চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে ঠোঁট ছুয়ে দেয় ভাই এর কপালের ওপরে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারও চিৎ হয়ে শুয়ে পরে ও। best bangla golpo
ভাবতে থাকে ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। সব কিছু কিনে এখন মাত্র হাজার চারেক এর মতো টাকা আছে হাতে। এ দিয়ে না হয় কোনোভাবে কষ্ট করে এই মাসটা চলা যাবে, কিন্তু তারপর? কিভাবে চলবে? যে করেই হোক একটা না একটা কাজ জোটাতেই হবে। বস্তির কেউ ওদের আসল সম্পর্ক জানে না। সকলেই জানে যে ওরা স্বামী-স্ত্রী। সৃজনকে সাবধান করতে হবে ও যেন আবার সবার সামনে আপু ডেকে না বসে!! যদিও সৃজন এর মুখে আপু ডাক শুনতেই বেশি ভালোবাসে ও তবে সবার সামনে তো আর তা ডাকা যাবেনা।
এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই কখন যেন ঘুম নেমে আসে ওর দুচোখে। এসব বস্তি এলাকাগুলোতে যেমন রাত নেমে আসে তাড়াতাড়ি তেমনি সকাল ও হয় তাড়াতাড়ি। কাকডাকা ভোরেই চারদিককার চিৎকার চেচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায় সৃষ্টির। সৃজন এর দিকে চেয়ে দেখে এখনো ঘুমোচ্ছে ও। আস্তে করে সৃজন এর ঘুম না ভাঙিয়ে উঠে যায় সৃষ্টি। পুরো এই বস্তিজুড়ে কল আছে মাত্র পাঁচটা। বালতিটা নিয়ে কলতলায় যেতেই দেখে পানির জন্য লম্বা লাইন লেগে গেছে। best bangla golpo
লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় বিশ মিনিট পরে পানি পায় সৃষ্টি। ভরা পানির বালতি বয়ে আনতে অনেক কষ্ট হয় ওর। পানি এনে দেখে সৃজন উঠে বসে আছে। বারান্দায় বালতিটা নামিয়ে রেখে ঘরে ঢোকে সৃষ্টি।
- কিরে ভাই? কখন উঠলি?
- অনেকক্ষণ। কই গিয়েছিলি আপু?
- পানি আনতে। চল হাতমুখ ধুবি।
সৃজনকে ধরে ধরে বাইরে নিয়ে আসে সৃষ্টি। হুইলচেয়ার এ বসিয়ে যত্ন করে হাত মুখ ধুয়িয়ে দিতে দিতে বলে শোন এখানকার সবাই কিন্তু জানে যে আমরা স্বামী-স্ত্রী। কারো সামনে যেন আবার আমাকে আপু করে ডাকিসনা। সৃজন কোনো কথা বলেনা। হাতমুখ ধোঁয়া শেষ করে যখন সবে চুলোটা জ্বালিয়েছে এমন সময়ে ওদের এখানে আসে কালকের সাহায্যকারী সেই মহিলা। সৃষ্টিকে চুলা ধরাতে দেখে বলে আহারে কি কষ্ট তোমাগো, সৃষ্টির নরম কোমল হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলে এই হাত কি কাম করনের হাত? best bangla golpo
দেইখাই বুজা যায় রড়লোক মাইনষের বেটি আছিলা। সৃষ্টি কিছু না বলে কেবল নীচদিক তাকিয়ে থাকে। মহিলা আবার বলে
- তা এইহানে যে আইছো খাইবা কি কইরা? খাওন দাওন এর একটা ব্যাবস্থা তো করন লাগবো?
সৃষ্টি যেন আশার আলো দেখতে পায়। মহিলার দুই হাত আকড়ে ধরে বলে
- ভাবি আমাকে একটা কাজ জুটিয়ে দিন না! যে কোনো কাজ। আমি সব করতে পারি সত্যি। একটা কাজ এর খুব দরকার আমার।
মহিলা কিছুক্ষণ ভেবে বলে তুমারে তো যে সে কাম দেওন যাইবো না, খাড়াও আমি এলাকার কুমিশনার সাব এর বাড়িত কাম করি। কুমিশনার সাব এই বস্তির পোলাপাইনগো জন্যে একখান ইস্কুল খুইল্যা দিছে। দেহি তারে কইয়া তুমারে ওইহানে ঢুকাইবার পারি নাকি।
সৃষ্টি বলে তাহলে তো ভাবি অনেক ভালো হয়।
সত্যিই মহিলাটা অনেক ভাল পরদিনই সৃষ্টিকে নিয়ে যায় কমিশনার এর বাসায়। কমিশনার সব শুনে চাকরি দিতে রাজি হয় সৃষ্টিকে। বস্তির স্কুল, মাস গেলে আট হাজার টাকা বেতন। সৃষ্টি রাজি হয়ে যায় তাতেই। best bangla golpo
যাক একটা ভাবনাতো অন্ততো দুর হলো। আগের কথা ভাবতে থাকে সৃষ্টি ওদের দুই ভাইবোনকে বাবা হাত খরচ ই দিতো দশ হাজার দশ হাজার করে বিশ হাজার টাকা। অবশ্য মাস শেষে দেখা যেত এক হাজারো খরচ হয়নি সৃষ্টির, বাকি টাকাটাও বাবা মায়ের আলক্ষে তুলে দিত ও ছোট ভাইটার হাতে।
আর এখন এই আট হাজার টাকার তিন হাজার বাড়ি ভাড়া দিয়ে বাকি পাঁচ হাজারে পুরো মাস চালিয়ে নিতে হবে!! বাড়ি ফিরে সৃজনকে চাকরির কথা জানায় সৃষ্টি। সৃজন কিছুই বলতে পারে না। কি বলবে ও? এই অক্ষম পা নিয়ে কিই বা বলবার আছে?
এদিকে সৃষ্টি সৃজনকে খুঁজে না পেয়ে পাগলা কুত্তা হয়ে উঠেছে রবিউল হাসান। কত্তো সুন্দর প্ল্যান ছিলো ওর। মারুফ মেম্বার এর সাথে মিলে মামুন সাহেবকে পরিবারসহ দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবে। তারপর বিয়ে করবে সৃষ্টিকে। সৃষ্টিকে বিয়ে করে সব কিছুর একছত্র মালিক হবে ও। তখন মারুফ মেম্বার কে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়া কোনো ব্যাপার ছিলোনা, কিন্তু এখন? ইচ্ছা করলে মারুফ মেম্বার ই যেকোনো সময় ল্যাং মেরে ফেলে দিতে পারে তাকে। না না এটা কিছুতেই হতে দেয়া যায়না। best bangla golpo
বেনসন এন্ড হেজেছ ঠোটে ঝুলিয়ে বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিতে থাকে রবিউল হাসান। হ্যা উপায় পেয়ে গেছে সে। মামুন সাহেবদের সবার অনুপস্থিতিতে এসব বিষয় সম্পত্তি সব এখন মারুফ মেম্বার এর। আর মারুফ মেম্বার এর একমাত্র উত্তোরাধীকারী হলো মনি! হ্যা মনি, মনিকে বিয়ে করবে ও। তাহলেই কেবল এ সম্পত্তি তার মুঠো গলে বেরিয়ে যাবার চান্স পাবেনা। মারুফ মেম্বার এর কাছে গিয়ে মনিকে বিয়ের প্রস্তাব দিতেই এক কথায় রাজি হয়ে যায় মারুফ মেম্বার।
তার কারন সে ঠিকি বুঝেছে এতো সব বিষয় সম্পত্তি একা হাতে সামাল দেয়া তার কর্ম নয়। রবিউল যদি তার জামাই হয় তাহলে শশুর জামাই মিলে এসব দেখাশোনা করা কোনো ব্যাপার ই না। শুরু হয়ে যায় বিয়ের তোড়জোড়। আর এদিকে সৃষ্টি রোজ স্কুলে যাওয়া আসা শুরু করেছে। খুব একটা কষ্ট না, কাছেই স্কুল। যেতে হয় সকাল দশটায়, আবার তিনটার মধ্যেই ফিরতে পারে। সৃজন এর পায়ের ব্যান্ডেজটা খোলা দরকার। সেদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় সাথে করে বস্তির একমাত্র ডাক্তারকে নিয়ে আসে সৃষ্টি। best bangla golpo
ডাক্তার এসে খুলে দেয় ব্যান্ডেজ। পা টা কেমন যেন নেতিয়ে আছে। কোমড় এর কাছ থেকে ঝুলছে অসড়ভাবে। সৃষ্টির ওই পা টার দিকে তাকাতেই কান্না পায়। অন্য দিকে তাকিয়ে ওড়নায় চোখ মুছতে থাকে। কিন্তু সৃজন নির্বিকার। ও ওর জীবনের চরম নিষ্ঠুর বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েছে। ডাক্তারকে নিয়ে ফেরার সময়ে সাথে করে দুটো ক্র্যাচ কিনে এনেছে সৃষ্টি। ক্র্যাচ দুটো হাতে তুলে নিয়ে সামান্য মুচকি হাসে সৃজন। এ দুটোই এখন ওর সারা জীবনের সার্বক্ষণিক সঙ্গী!! বগলে ক্র্যাচ লাগিয়ে কিছুক্ষন হেটে দেখে সৃজন।
না খুব একটা কষ্ট না হাটা। মনে হয় যেন কতো দিন পর সৃষ্টির সাহায্য ছাড়া একা একা দাড়াতে পারছে!! ডাক্তার বেরিয়ে যেতেই ক্র্যাচ হাতে ভাইকে দেখে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না সৃষ্টি। ভাইকে জড়িয়ে হুহু করে কাঁদতে থাকে। বোনেত খোলা চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে সৃজন। এই পাগলি কাঁদছিস কেন?
আমার তো কোনো অসুবিধা হচ্ছে না, এই দেখনা কেমন দিব্যি হাটতে পারছি এখন। সৃষ্টি ভাইকে ছাড়েনা, জোরে জড়িয়ে ধরে রাখে নিজের বুকে। সারা জীবন ও এভাবেই আগলে রাখবে ওর ভাইকে। best bangla golpo
কক্ষনও কোনো বিপদকে ছুতে দেবেনা। সৃষ্টি সৃজন বস্তিতে থাকলেও ওড়া যেন সবার থেকে আলাদা। প্রতিদিন বস্তির কোনো না কোনো ঘরে ঝগড়া লেগেই আছে আছো প্রায় এক মাস হতে চললো কেউ কখনো ওদের দুজন এর ঘর থেকে একটু জোরে কথাও শোনেনি। সবাই ওদের একটু আলাদা সম্মানের চোখেই দেখে। বাচ্চাদের স্কুলে পড়ায় বলে আশপাশের সবাই সৃষ্টিকে ডাকে মাষ্টারনী বলে।
শুনতে খুব একটা খারাপ ও লাগেনা সৃষ্টির। পাশের বাড়ির ভাবিটা তো প্রায়ই সৃজনকে বলে বুঝলা মিয়া ভাইগ্যগুনে মাষ্টারনীর লাহান একটা বউ পাইছো। এরম বউ লাখে একটা। মিলে না। শুনে কেবল মুচকি হাসে সৃজন। সত্যিই তো ওর বোনটার মতো করে ভালোবাসতে পারে আর কয়জন??
বিয়ের দিনক্ষণ পাকা হয়ে গেছে রবিউল আর মনির। কেনাকাটা নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছে সবাই। সৃষ্টির ঘরটা নিজের জন্য দখল করেছে মনি। আপাতত বিয়ের আগ পর্যন্ত সৃজন এর ঘরটাতেই থাকছে রবিউল। আর মামুন সাহেব এর বেডরুম এখন মারুফ মেম্বার এর দখলে। best bangla golpo
থেমে নেই সৃজন সৃষ্টির জীবন ও। আস্তে আস্তে ওরাও অভ্যস্ত হয়ে উঠছে এই জীবনটার সাথে। এই বস্তিজীবন এ এসে সৃষ্টি অনুভব করতে পারছে ভালোবাসার কাছে আসলে টাকা পয়সা বিষয় সম্পত্তি সব ই তুচ্ছ। এই অনিশ্চিত জীবনের মাঝেও ভালোবাসার আলাদা একটা অনুভুতি আছে। মূলত ভালোবাসাটা হলো সার্বজনীন। সেদিন সকালে সৃষ্টির স্কুলে একটা মিটিং আছে। এ জন্য তারাতারি করে রান্নাবান্না শেষ করে সৃজনকে খায়িয়ে বেরিয়ে যায় সৃষ্টি। সৃষ্টি চলে যাবার পরে সময়টা একাই কাটে সৃজন এর।
সৃষ্টি জানে সৃজন কেমন বই এর পোকা। এ জন্য স্কুল থেকে আর পুরোনো লাইব্রেরী থেকে বেশ কিছু বই এনে দিয়েছে ওকে। অগুলো পড়তে পড়তে দিব্যি সময় কেটে যায়। সৃষ্টি ওর স্কুলের বাচ্চা আর টিচার সবার কাছেই অল্প দিনেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টিচারদের মধ্যে ওর বয়স ই সবচেয়ে কম। সবাও ওকে অনেক আদর করে, বিশেষ করে হেড মিস্ট্রেস এর কাছেতো এখন সৃষ্টি সবচেয়ে প্রিয়। সেদিনকার মিটিং এ স্কুল কমিটির কাছে সব টিচাররাই সৃষ্টির অনেক প্রশংসা করে। best bangla golpo
সৃষ্টি সবার প্রশংসা শুনে কেবল একটু লাজুক হাসে। মিটিং শেষ হলে সব টিচারদের জন্য সেদিন নাস্তার ব্যাবস্থা করা হয়। একটা করে মিষ্টি, সমুচা আর সিঙ্গারা। প্যাকেট খুলে মুখে দিতে গেলেই সৃষ্টির মনে পরে যায় সৃজন এর কথা। আর মুখে ওঠে না ওর। প্যাকেটটা আবার মুরে ঢুকিয়ে নেয় সাইড ব্যাগটায়। হেড মিস্ট্রেস খেয়াল করে বলে কি ব্যাপার সৃষ্টি ল? তুমি খেলে না যে?
- আসলে ম্যাম আমার গ্যাসের প্রবলেম তো একটু, আজ সকালে অষুধ খেতে ভুলে গেছি এখন এগুলা খেলে আমাকে আর দেখতে হবে না।
হেড মিস্ট্রেস আদরের হাত বুলিয়ে দেয় সৃষ্টির গালে। সত্যি তুমি খুব মিষ্টি একটা মেয়ে।
বাড়ি ফিরে সৃষ্টি প্যাকেট টা দেয় সৃজন এর হাতে।
- কি এটা আপু?
- খুলে দেখ কি?
- আরে সমুচা সিঙ্গারা বাহহ অনেকদিন পর। best bangla golpo
প্যাকেট থেকে বের করে খেতে নিয়ে বোনের কথা মনে পরে সৃজন এর। আমার জন্য এনেছিস তুই খাসনি?
- আমি খেয়েছি ভাই। এটা তোর জন্য। তুই খা।
সৃজন জানে সৃষ্টি না খেয়ে ওর জন্য এনেছে। সিঙ্গারাটা ভেঙে নিজে মুখে দিয়ে একটা অংশ নিজের হাতে তুলে দেয় বোনের মুখে।
ভাই এর ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে সৃষ্টি সিঙ্গারা টা চিবোতে চিবোতে কেঁদে ফেলে। বোনের চোখের জল দেখে মুচড়ে ওঠে সৃজন এর ভেতরটাও। ওর চোখ দুটোও ঝাপসা হয়ে আসে। তারাতারি করে অন্য দিকে তাকায় সৃজন, কেননা ছেলে মানুষ এর চোখে জল যে বড্ড বেমানান! (চলবে.)
ঠিক যেন লাভস্টোরী - 15
Related posts: